শাক-সবজি চাষ পদ্ধতি

মাঠে, বাগানে, হাট-বাজারে আমরা প্রতিনিয়ত সবজি দেখতে পাই। আমরা সবজির চাহিদা পূরণ করি

আমাদের নিজস্ব জমি বা বাজার থেকে সংগ্রহ করে। এবার আমরা জানবো এগুলোর চাষাবাদ সম্পর্কে

তবে এর আগে জেনে নিন চাষ পদ্ধতি, সবজির গুরুত্ব ও বিবেচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে। 

শাকসবজির গুরুত্ব

শাকসবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। উন্নত দেশগুলোতে সবজির উৎপাদন ও ব্যবহার অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

একদিকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে অন্যদিকে পারিবারিক চাহিদা মেটানো যায়। হাত, পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত অবশিষ্ট সবজি বাজারে  বিক্রি করে আয় করা যায়।

তাই খাদ্য, ভিটামিন, খনিজ এবং অর্থকরী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করা খুবই জরুরি।

খাদ্য হিসেবে শাকসবজি

শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি এবং সি রয়েছে। এ ছাড়া সবজি

পুষ্টি, ক্যালোরি এবং খনিজগুলির উত্স হিসাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভেষজ গুণাগুণ হিসেবে শাকসবজি: ভেষজ গুণ হিসেবে শাকসবজির রয়েছে অনেক অবদান। জন্য

উদাহরণস্বরূপ, শসা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রসুন বাত ইত্যাদি নিরাময় করে।

অর্থনৈতিক সবজি: শাকসবজি মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। প্রত্যেকেরই সেবন করা দরকার

অন্তত 400 গ্রাম সবজি একটি সুস্থ এবং সবল শরীর নিয়ে বাঁচতে। অতএব, এর উৎপাদনে

সবজি দিয়ে একদিকে যেমন পরিবারের চাহিদা মেটানো যায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও সচ্ছল হতে পারে।

সবজি বিক্রি করা অনেক লাভজনক। সবজি চাষ করে পতিত জমিকে কাজে লাগানো যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়, সমাধান করা যায়

বেকারত্ব সমস্যা, নতুন শিল্প তৈরি ও বিকাশ এবং নারী ও পারিবারিক শ্রমশক্তিকে কাজে লাগান।

তাই বলা যায়, বাংলাদেশে সবজির উৎপাদন সব দিক থেকে লাভজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ।

সবজির শ্রেণীবিভাগ

পৃথিবীতে অসংখ্য গাছপালা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে প্রায় ৬০ জাতের সবজি চাষ হয়

দেশ উৎপাদনের মৌসুমের ভিত্তিতে এসব সবজিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

(1) শীতকালীন সবজি

শীতকালীন সবজি: টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মটরশুটি, গাজর ইত্যাদি।

(2) গ্রীষ্মকালীন সবজি

গ্রীষ্মকালীন সবজি: করলা, চিংড়ি, পটল, ধুন্দুল, পুইশাক ইত্যাদি।

(3) বছরব্যাপী শাকসবজি।

বছরব্যাপী সবজি: বেগুন, মুলা, পেঁপে, কালে ইত্যাদি।

শিম, টমেটো প্রধানত শীতকালীন সবজি। বর্তমানে দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলোতেও ফল ধরে। গ্রীষ্ম গিমা কলমি নামক কলমিশাক প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। সাথে শসা সারা বছর পাওয়া যায়। তাই এই সবজিকে বহুবর্ষজীবী সবজি বলা হয়।

সবজি উৎপাদন বিবেচনা

আমরা অনেক আগে থেকেই জেনেছি বিভিন্ন সবজির নাম এবং কোনটি কোন ঋতুতে জন্মায়।

এবার জেনে নেওয়া যাক সবজি উৎপাদন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। যে কোন ফসল চাষ বা উৎপাদনের আগে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত

ভালো বীজ, বীজতলা জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি, বীজ বপন ও বীজতলা পরিচর্যা, মূল জমি নির্বাচন ও জমি প্রস্তুতি, বীজ বপন এবং রোপণ, জল সেচ এবং নিষ্কাশন, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং মালচিং, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সময়মত ফসল কাটা।

শাকসবজি খুবই লাজুক ফসল। সেজন্য একটু যত্ন নিয়ে চাষ করতে হয়। সবজির মাটি খুব মিহি ও ঝরঝরে করতে হবে। জমি সমতল করুন। সেজন্য প্রতিটি চাষের পর ভালোভাবে মই দিলে জমিতে কোনো বড় ছিদ্র থাকবে না। বেড়া দিয়ে সবজি চাষ করলে সেচ ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা হয় এবং ফলনও বেশি হয়। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব বা পচা সার প্রয়োগ করতে হবে।

জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিয়ে 'জো' আসে, তারপর লাঙ্গল দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজ বপন করে। আবার অনেক ধরনের সবজি মাড়াতে দিতে হয় যেমন শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদি। প্যাকেটে চারা তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর গাছগুলো বড় হলে মাচা বা মাচা তৈরি করতে হবে। আর হ্যাঁ, মাড়ায় চারা রোপণের আগে রাসায়নিক সারও পরিমাণে ও সুষম হারে দিতে হবে।

সবজি চাষে সার

সবজি চাষে সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আসুন এবার জেনে নেই সার প্রয়োগ সম্পর্কে।

শেষ চাষের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, এমপি সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় আবেদন আরও 15 দিন পরে করা উচিত। অন্যান্য সবজি যেমন লাউ বা কুমড়ার ক্ষেত্রে, প্রতিটি লাউতে 15 কেজি গোবর, 500 গ্রাম সরিষা, 250 গ্রাম ইউরিয়া, 250 গ্রাম টিএপি এবং 250 গ্রাম এমপি প্রয়োগ করতে হবে।

শুধুমাত্র জৈব সার ব্যবহার করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু জৈব সার সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। সার বা কম্পোস্ট জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সবজি চাষে বীজতলার যত্ন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বীজ/চারার বপন-

আধুনিক জাতের ফসলের ভালো বীজ উপযুক্ত 'জো' অবস্থায় জমিতে বপন করতে হবে। বীজ বপন বা চারা রোপণ বিকালে করা ভাল।

এখন আমরা জানবো বীজতলায় কী ধরনের যত্ন নিতে হবে- গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে তুলে ফেলতে হবে। রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজ বপনের পরপরই, সেভিন পাউডার বীজতলার চারপাশে একটি লাইনে ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে পিঁপড়ারা বীজ নিয়ে যেতে না পারে।

ফল সবজি যেমন বেগুন, মিষ্টি কুমড়া গাছে বা থোকায় অতিরিক্ত ফল থাকলে পুষ্টির অভাবে সঠিকভাবে বাড়তে পারে না। ফল আকারে ছোট, বিকৃত এবং নিম্নমানের। ফল ছোট অবস্থায় ফল পাতলা করা হলে গাছের ফল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এখন শুষ্ক মৌসুম। আমরা জানি যে বেশিরভাগ সবজির প্রায় 90% জল থাকে। এ কারণে সবজি ফসলের ভালো বৃদ্ধির জন্য পানি অপরিহার্য। রোপণের পর মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। সকালে বা সন্ধ্যায় ফসলে সেচ দিতে হবে। দুপুরের কড়া রোদে সেচ দিলে গাছ ঝলসে যায়।

তাছাড়া এ সময় পানি বাষ্পীভূত হয়ে পানির অপচয় হয়। বাসাবাড়ির সবজি বাগানে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে ঘন ঘন সেচ দিলে ভালো হয়। সবজি ফসল 2-3 দিনের বেশি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেচ দেওয়ার পর জমিতে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যতবার বৃষ্টিপাত বা সেচের পরে মাটি শুকিয়ে যায়, উপরের মাটি পড়ে যায়। 'জো' আসার সাথে সাথে হাতের রেক, কোদাল বা কোদালের সাহায্যে মাটির স্তর 1-2 ইঞ্চি গভীর করে ভেঙে ফেলতে হবে।

গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা অবিলম্বে তুলে ফেলতে হবে। রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সবজি বাড়ানোর পর মাঝে মাঝে মনোযোগ দিলে বুঝতে পারবেন কোন সবজির কী ধরনের যত্ন প্রয়োজন।

চারা পচা ও গোড়া পচা রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য আগে থেকেই মাটি পরিষ্কার করা ভালো। চারা গজানোর পর 'রুট পচা' রোগ দেখা দিলে বীজতলায় পানির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। দ্রুত নিষ্কাশন বা শুকনো বালি বা ছাই ছিটিয়ে আর্দ্রতা হ্রাস করা যেতে পারে। ডাইথেন M-45 বা কপার অক্সিক্লোরাইডের একযোগে প্রয়োগ রোগের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।

বন্ধুরা, এইতো গেলো শাকসবজি চাষ ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু আলোচনা। নিজে সুস্থভাবে বাঁচতে, দেশের খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে পরিবেশ ও আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করুন। আল্লাহ হাফেজ।